শ্রীমঙ্গলের চুঙ্গি পিঠা
Published : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭ | 2642 Views

বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকায় বিশেস কিছু খাবার বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানানোর রেওয়াজ আছে। এসব পিঠা যেমনি সুস্বাদু তেমনি শিল্পবোধ সম্পন্ন। নকশী পিঠার নকশা আর স্থানীয় পিঠার স্বাদ কোনোটাই ভোলার নয়। লোকজ এসব উপাদান সারা পৃথিবীতে সুভেনির বা স্মারকপন্য হিসেবে ট্যুরিজম এর সাথে এর প্রমোশন চালানো হয়। এবং এসব স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্যও মানুষ ছুটে যায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে। কিন্তু আমরা সেটা পারি না।
ঢলু বা ঢুলি বাঁশের লম্বা যেগুলো চিকন ও কম গিরা থাকে। সেগুলো কেটে চোঙ্গায় সঙ্গে দুধ, চিনি, নারকেল বিন্নি চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরী হয় চুঙ্গি পিঠা। নাড়া মানে ধানক্ষেতে শুকিয়ে যাওয়া ধানগাছের নিচের অংশ বা খড় এর আগুনে বাঁশের খোলের ভেতর সেদ্ধ হয়ে তৈরি হলো লম্বাটে সাদা পিঠা।
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে এক সময় শীত মৌসুমে ভাপা, পুলি আর মালপো পিঠার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎসব মাতালেও এই পিঠার এখন দেখা পাওয়াই দুষ্কর। এক সময় বাড়িতে জামাই এলে এই চুঙ্গা পিঠার সঙ্গে হালকা মসলায় ভাজা মাছ বিরাণ ও নারিকেল ও কুমড়ার মিঠা বা রিসা পরিবেশন না করতে পারলে যেনো লজ্জায় মাথা কাটা যেতো গৃহকর্তার। কুয়াশা মোড়া রাতে রাতভর চলতো চুঙ্গাপুড়া তৈরি। গিট্টু মেপে ছোট ছোট করে কাটা বাঁশের ওপর জ্বলতো খড়ের আগুন।
সব মিলিয়ে এ পিঠা তৈরির আবহটাই তৈরি করে দিতো উৎসবের আবহ। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা বানাতে ঢলু নামে যে বিশেষ প্রজাতির বাঁশ দরকার হয় তা বিলুপ্ত হতে বসায় চুঙ্গাপুড়ারও আকাল চলছে এখন। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন আর পাহাড় উজাড়ের কারণে ঢলু বাঁশ এখন সহজে পাওয়াই মুশকিল। এমনকি, মৌলভীবাজারের বড়লেখার এই পিঠা তৈরির সুনাম থাকলেও ঢলু বাঁশের আকাল এখন সেখানেও।
এক সময় পাহাড়ি আদিবাসিদেরই খাবার ছিলো এই চুঙ্গা পিঠা। কালক্রমে তা সমতলের মানুষের উৎসবে অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে ওঠে। চাল ভিজিয়ে নরম করে বাঁশের চোঙ্গায় সেঁধিয়ে পিঠা তৈরি করতে শিখে যায় সব জাতি-ধর্মের মানুষ।
সেদ্ধ হওয়ার পর যে কোনো দিকে টান দিলেই ছিলকা খুব সহজেই উঠে যায় ঢলু বাঁশের। কয়েক ঘণ্টা পোড়ানোর পরও যেনো কাঁচাই থাকে বাঁশটা। আর ভাপে সেদ্ধ হয়ে ভেতরের বিন্নি চাল তখন রূপ নিয়ে নেয় মোটা মোমবাতির।
কিন্তু ঢলু বাঁশের মতো বিন্নি ধানও এখন চাষ হচ্ছে কম। তাই কদাচিৎ পাওয়া গেলেও চড়া দামে কিনতে হয় চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান দুই উপকরণ। সিলেটের এতিহ্যবাহী এই পিঠা তাই হারিয়েই যেতে বসেছে। এভাবে বাংলার অনেক এলাকায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন পিঠা। গ্রামীন জীবনে ছড়িয়ে পড়েছে শহুরে জীবনের প্রভাব কিন্তু এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। এখনই যদি আমরা হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য বাঁচাতে না পারি। তাহলে আমাদের গৌরবময় অতীত নিয়ে গৌরব করার সুযোগও হয়তো থাকবেনা।
সূত্র: বাংলানিউজ।
Published : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭ | 2642 Views