ফিরে এসো অরাল
Published : জুন ১৮, ২০১৭ | 2164 Views

ফিরে এসো অরাল
অরাল নামের একটি সাগর । এই সাগরের বুকে এক সময় মুক্তোর মালার মতো বিরাজ করতো ১৫৩৪ টি দ্বীপ । আটষট্টি হাজার বর্গকিলোমিটার (২৬,৩০০ বর্গমাইল) এলাকা নিয়ে এককালের সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখাস্তান আর উজবেকিস্তানের মাঝখানে টলটলে পানিতে ভরা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম এই লেকটি এতো বিশাল ছিল যে সবাই এটিকে ডাকত সাগর বলেই।
একসময় এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অন্তর্দেশীয় জলের শরীর ছিল (body of water) হিসেবে অভিহিত করা হতো। ওরাল সাগর কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তান এর সীমানায় মধ্য এশিয়ার একটি অন্তর্দেশীয় সমুদ্র। ওরাল সাগরের দুটি নদী থেকে এটা ৫০ বছর আগে পার্শ্ববর্তী মরুভূমি অঞ্চলে সোভিয়েত সেচ প্রকল্পের জন্য পানি সরবরাহ করা হতো। ফলাফল, ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ এর সালের মধ্যে, এটা তার আয়তনের প্রায় 90 শতাংশ হারিয়ে ফেলেছে।
বহু বছর আগে মৈনাকে পানি ছিলো, মাছ ছিলো। ওরাল সাগরের পরিবেশ বিপর্যয় মৈনাককে নিঃস্ব রিক্ত করে দিয়েছে। এই পরিবেশ বিপর্যয় একদা কর্মমুখর শহরকে রোদে পোড়া পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত করেছে। যার চারপাশে এখন বালু আর বালু। ওরাল সাগরের আয়তন কমে যা”েছ। আর এ বিপর্যয় এখন বিজ্ঞানীদের কাছে সবচেয়ে তীব্র প্রাকৃতিক সংকট বলে বিবেচিত। ওরাল সাগর এক সময় চতুর্থ ব”হত্তম হ”দ ছিলো। ১৯৬০–এর দশকে ওরাল সাগরের আয়তন কমে দশ শতাংশ। এই বিপর্যয়ে মৈনাক যতটা আক্রান্ত হয়েছে, আর কোন শহর ততটা আক্রান্ত হয় নি। জল এখন মৈনাক থেকে কমপক্ষে দেড়শো কিলোমিটার দূরে। আর এখানকার মাছধরা নৌকাগুলো পড়ে আছে মরুভুমিতে, সারিবদ্ধভাবে, যেন কোন পরাবাস্তব শীল্পকর্মের প্রদর্শনী চলছে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো জং ধরা জাহাজের পাশে এখন ঘুরে বেড়ায় উটের পাল।
তুলা চাষের জন্যে সোভিয়েত সরকারকে সেই ১৯৪০ সাল থেকেই সেচ ব্যবস্থার কথা ভাবতে হয়েছিলো । কিন্তু সেচের খালগুলি ছিলো খুব অপরিপক্ষ ভাবে নির্মিত । এ থেকে পানি শুষে নিত মাটি, রোদের তাপে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যেতো । এই সেচ প্রকল্পের অর্ন্তভূক্ত মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম কারাকোরাম ক্যানালের ৩০ থেকে ৭৫% পানিই এভাবে অপচয় হয়ে যেতো । এইসব কারনেই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হয়েছিলো বিকল্প কিছু । তাই ১৯৬০ সালে গৃহীত হয় নতুন ইরিগেশান প্রোজেক্ট যাতে আমু-দরিয়া আর সির-দরিয়ার পানিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সেচের খালগুলিতে
ওরাল সাগর (Aral Sea) সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে, যেখানে একসময় নীল জলরাশি ছিল এখন সেখানে শুকনো সাদা হ্রদ। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে একটি রাডার উপগ্রহের চোখে, সমুদ্র উপকূলের চেহারাকে একটি রঙিন বিমূর্ত চিত্রকলার (colorful abstract painting) মত দেখায়, সেটিই ধরা পড়েছে ।
ওরাল ক্ষীণ হতে শুরু করলে জেলেরা জল অনুসরন করে নীচে নামতে থাকে। কিছু দিন পর ওরালের জলে বেড়ে যায় লবনের মাত্রা। মারা যায় সকল মাছের প্রজাতি। মাছধরা জাহাজগুলো পরিত্যাক্ত হয় মরুভুমির মাঝখানে। মাছ আহরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনসংখ্যা কমতে থাকে মৈনাকের। তিন দশক পর এখন মৈনাকে আর কেউ থাকেনা। ওরালের স্বাস্থ্যহানি ও মৈনাকের মরণের কারণ তুলা চাষে সেচ। ওরালের জল সরবরাহের প্রধান নদী আমু দরিয়া। এই নদীর পানি প্রবাহ বদল করে সেচ দেয়া হয় এই এলাকার তুলা চাষে। আর পরিহাস হলো, মৈনাকের মানুষ এখন আর মাছ ধরে না, তার তুলা ক্ষেতে কাজ করে।
প্রতি বছর ২০ থেকে ৬০ ঘন কিলোমিটার পানি উড়াল সাগরের পরিবর্তে গিয়ে পড়লো সেচের খালগুলিতে । ফলে হতভাগী উড়াল সাগরের পানির উচ্চতা হ্রাসের পরিমান বেড়ে যেতে থাকলো হু হু করে । প্রতি বছর এখোন এই উচ্চতা হ্রাসের হার ৩১ থেকে ৩৫ ইঞ্চি । কেবলমাত্র ১৯৮০ সালের মধ্যেই উড়াল সাগর থেকে যে পানি হারিয়ে গেলো তার পরিমান লেক “ইরি” আর লেক “অন্টারিও” তে যতো পানি আছে তাদের সমান ।
আটষট্টি হাযার বর্গকিলোমিটার (২৬,৩০০ বর্গমাইল) এলাকা নিয়ে একদিন অরাল ছিলো পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম লেক । “আমু–দরিয়া” আর “সির–দরিয়া” নদীর বয়ে আনা পানিতে তৈরী হয়েছিলো তার টলটলে শরীর । বসতি ছিলো তীরে , ছিলো জেলেদের হৈ–হৈ । শিশুদের হুড়োহুড়ি । বাতাসে ছিলো মাছের আঁশটে গন্ধ ।বন্দরে বন্দরে ছিলো মাছ ধরা জাহাজের আনাগোনা ।
আজ নেই – আজ তার বুকে শুধু ধূঁ–ধূঁ বালুচর । রূপোলী জলে আর চিকচিক করে ওঠেনা মাছেদের বুক । ভাসেনা পাল তোলা নাও ।
সূত্র: ইন্টারনেট, এ্যাটলাস অবস্কিউরা অবলম্বনে
Published : জুন ১৮, ২০১৭ | 2164 Views